সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
রূপগঞ্জের রূপসীতে অবস্থিত গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে ৮ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে গাজী টায়ার কারখানায় জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক এ তথ্য জানান।
এই তদন্ত কমিটিতে বিদ্যুৎ কল কারখানা ফায়ার সার্ভিসসহ সব বিভাগের কর্মকর্তা রয়েছে। এ সময় তিনি গাজী টায়ার কারখানা পরিদর্শন করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, ৮ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের একটি তালিকা তৈরি করতে। ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাজী টায়ারের ভবনটির ভেতরে সালফারসহ কেমিক্যাল থাকার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও তাপ ও ধোঁয়া রয়ে গেছে- এ কারণে উদ্ধার কাজ চালানো যাচ্ছে না। খুব দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করা হবে।
নিখোঁজদের একটি তালিকা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসেছে। গত রোববার রাত ১০টায় আগুন লাগলেও ৪৮ ঘণ্টা পর এর কোনো সুরাহা হয়নি।
৪৮ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মঙ্গলবার রাত ৯ টায় গাজী টায়ারে উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের এসেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন ঢাকা ফুলবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন। তবে গত রাতেও গাজী টায়ার কারখানা জ¦লতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই নিখোঁজদের স্বজনরা কারখানার ভেতরে ও বাইরে এসে ভিড় জমাতে থাকে। উদ্ধার কাজ শুরু না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ পর্যন্ত ১৭৫ জন নিখোঁজের তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস। নিখোঁজের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
গতকাল সকালে পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কারখানা পরিদর্শন করেন।
সরেজমিন জানা গেছে, রোববার রাত ১০টার দিকে গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাটের পর আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
গন্ধর্বপুর এলাকা থেকে আসা লিপি আক্তার বলেন, আমার ছোট ভাই আলামিন বন্ধু মাহফুজের সঙ্গে গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে রোববার রাত ৯টার দিকে আসেন। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। এখনো উদ্ধার কাজ শুরু করেনি ফায়ার সার্ভিস।
রূপসী মীরবাড়ীর আতাউর বলেন, আমার স্ত্রীর লাশটা এখনও পাই নাই।
যাত্রামুড়া এলাকার পাপরি আক্তার বলেন, আমার ভাই মাহাবুব নিখোঁজ। আমার ভাইয়ের লাশ না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবো।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ভবনটিতে দীর্ঘসময় ধরে আগুন জ্বালার কারণে ভবনটি ধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। ভবনের দেওয়ালের ইট খুলে পড়ছে। এছাড়া ভবনের তাপের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনে প্রবেশ করতে পারছে না। আজ গণপূর্ত বিভাগের লোক এসে ভবনটি পরীক্ষা করার পর উদ্ধারের সিদ্ধান্ত জানাবে।
ঝুঁকি থাকায় এখনই ভবনের ভেতর কোনো অনুসন্ধান চালানো যাচ্ছে না বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই ভেতরে যাচ্ছি না। ভোরে টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) মেশিন দিয়ে ভবনের বাইরে থেকে ছাদে দেখা হয়েছে। হতাহত কাউকে পাওয়া যায়নি।’
সকাল থেকে ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশ খসে পড়তে দেখা গেছে। নিরাপত্তার জন্য ভবনের আশপাশে যাচ্ছেন না কেউ। এ সময় কারখানার বিভিন্ন অংশে দুর্বৃত্তদের লুটপাট করতে দেখা যায়।